Tuesday, May 20, 2025
No menu items!
spot_img
Homeবাংলাদেশলংকায় গেলে রাবণ হয়—বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের দায়হীন রূপ - রাজা গোলাম রাব্বানী

লংকায় গেলে রাবণ হয়—বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের দায়হীন রূপ – রাজা গোলাম রাব্বানী

নতুন প্রজন্ম ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে, বিভক্ত রাজনৈতিক নেতাদের চাপ সৃষ্টি করতে হবে বৃহত্তর ঐক্য গঠনে, আদর্শিক ও নাগরিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি বর্জন করতে হবে, ড. ইউনূসের মত আন্তর্জাতিক সম্মানিত ব্যক্তিত্বকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানাতে হবে।

বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস মূলত একের পর এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর আদর্শভিত্তিক আন্দোলনের ইতিহাস। পলাশীর প্রান্তর থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন কিংবা সদ্য ঘটে যাওয়া ২০২৪-এর গণবিপ্লব—প্রতিটি পর্যায়ে এই দেশের সাধারণ জনগণই ছিলেন মূল চালিকাশক্তি। তারা তাদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে শুধুমাত্র একটি আশা নিয়ে—মুক্তির স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।

কিন্তু, অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে, এ দেশের রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ প্রায় প্রত্যেক সময়েই জনগণের এই আত্মত্যাগের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। তারা দেশের স্বার্থ নয়, নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়া, পরিবারতন্ত্র ও দলে-দলে ভাগ হয়ে সম্পদ লুটের রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

“যে যায় লংকায়, সেই হয় রাবণ” এই প্রবাদের যথার্থতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। জনগণের রক্তে রঞ্জিত যেকোনো বিপ্লব বা আন্দোলনের পরে, যারা নেতৃত্বে আসেন, তারা খুব দ্রুত ক্ষমতার মোহে আক্রান্ত হয়ে যান। তারা ভুলে যান জনগণের দাবি, ভুলে যান ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস। প্রতিবারই দেখা গেছে, রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক নেতারা আদর্শ নয়, স্বার্থ আর দখলদারিত্বে মগ্ন হয়ে পড়েন।

২০২৪ সালের গণবিপ্লবের পর সাধারণ মানুষ আশাবাদী ছিল—পুরাতন সিস্টেমের অবসান হবে, একটি নতুন, ন্যায়ভিত্তিক, নাগরিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। মানুষ চেয়েছিল একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠুক, যেখানে দলীয় স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থ থাকবে প্রধানতম বিবেচনায়।

কিন্তু মাত্র ৮ মাস পার হতে না হতেই, সেই স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে। বিভাজন, দলীয় কোন্দল, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা এবং নিজের ঘরের স্বার্থ নিয়ে রাজনীতিবিদরা আবার পুরনো খোলসে ঢুকে পড়েছেন। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য আজ প্রশ্নবিদ্ধ; নাগরিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন আজ মেঘে ঢাকা।

বিশ্বজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি অপ্রত্যাশিত সম্ভাবনা, বিশ্বে শান্তি, ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটে এক অভূতপূর্ব সম্ভাবনার নাম। একটি নৈতিক, জনকল্যাণমূলক, দূরদর্শী নেতৃত্ব যেখানে বিরল হয়ে উঠেছে, সেখানে তার মত একজন নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যক্তিত্বকে আমরা যদি রাষ্ট্রীয় সংস্কার প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে কাজে না লাগাতে পারি, তাহলে আমরা জাতি হিসেবে আবারও একটি ভয়াবহ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ধ্বংসের পথে হাঁটবো।

এমতাবস্থায় আমরা জনগণের করণীয় কী হতে পারে এই প্রশ্নটি বড় আকারে দেখা দিয়েছে। নতুন প্রজন্ম ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে, বিভক্ত রাজনৈতিক নেতাদের চাপ সৃষ্টি করতে হবে বৃহত্তর ঐক্য গঠনে, আদর্শিক ও নাগরিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি বর্জন করতে হবে, ড. ইউনূসের মত আন্তর্জাতিক সম্মানিত ব্যক্তিত্বকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানাতে হবে।

যদি এখনই সচেতন না হই…তাহলে খুব বেশি দেরি নেই আমরা আবারও ফিরে যাব ক্ষমতার দখলদার রাজনীতির সেই অন্ধকার যুগে, যেখানে জনগণের রক্ত আর চোখের পানি শুধুই প্রতারণার স্মারক হয়ে থাকবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments