Monday, November 25, 2024
No menu items!
spot_img
Homeবাংলাদেশঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও সংহতি দিবসঃ আজকের প্রেক্ষাপট

ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও সংহতি দিবসঃ আজকের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে যে সকল ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদের জাতীয় জীবনে ঘটেছে ; তারমধ্যে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এর কালজয়ী সিপাহী -জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস অন্যতম।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসাইনঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে যে সকল ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদের জাতীয় জীবনে ঘটেছে ; তারমধ্যে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এর কালজয়ী সিপাহী -জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস অন্যতম।
স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান দেশে আসার পর থেকেই শাসকগোস্ঠী দেশ শাসনের নামে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে এবং সর্বশেষ সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল প্রতিস্ঠার মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করে। যে কারনে ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতা ফ‍্যাসিবাদের আইকন মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় নেতা মরহুম খন্দকার মোস্তাক আহমেদর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনের খেতাবপ্রাপ্ত সাহসী যোদ্ধাদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পটপরির্তনের কিছু দিন পর থেকে আধিপত্যবাদী অপশক্তির ইশারায় দেশকে অনিরাপদ করার লক্ষ্যে ৩রা নভেম্বর ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এর নেতৃত্বে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাস্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর একদল বিপথগামী সৈনিক ক্যাপটেন হাফিজ উল্লাহ’র নেতৃত্বে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এর র্নিদেশে বাংলাদেশর মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক তৎকালিন সেনাবাহিনীর প্রধান ও সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাক্তি পরর্বতিকালে বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্র নায়ক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আর্দশের প্রবক্তা জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনানিবাসে বন্দি করে দেশকে পুনরায় একদলীয় দুঃশাসনের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে। সেনানিবাসে জেনারেল জিয়ার বন্দির খবর বিদ্যুৎ গতিতে সবর্ত্র ছড়িয়ে পরে। সাধারন সৈনিক ও দেশবাসীর মনে ভয়ানক ক্ষোভের জন্ম দেয়। চারদিকে থমথমে পরিবেশের মধ্যে গোটা বাংলাদেশ হয়ে পরে অভিভাবকহীন। ইতিহাস বলে আমার প্রিয় মাতৃভুমি যেনো অনিশ্চিত ভয়াল সমুদ্রের মধ্যে দিকহারা হয়ে পরেছিল। এরই মধ্যে ভেতরে ভেতরে দেশপ্রেমিকদের মধ্যে চলছিল ঘুরে দাঁড়াবার এক বিপ্লবী তৎপড়তা । জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে দেশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে মুক্তিযুদ্ধের সাহসী যোদ্ধা কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ আবু তাহেরের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের মধ্যে একটা গভীর ঐক্য সৃষ্টির নির্ভীক প্রচেষ্টা চলছিল। যদিও পরবর্তীকালে কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ আবু তাহের জেনারেল জিয়াকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। যে কারনে কর্নেল তাহেরের সাথে জেনারেল জিয়ার মতপার্থক্য দেখা দেওয়ায় দুজন দুই মেরুতে অবস্থান নেয়।

এর পরের ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। দেশের আপামর জনগন অপেক্ষায় ছিল ৭ নভেম্বরের কাঙ্ক্ষিত পরির্তনের। রাজনৈতিক দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তন হতে লাগলো।দেশের মধ্যে ঘটে গেলো অনেক অনাকাংখীত ঘটনার। ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ ভোড় রাতে স্বাধীনতা রক্ষার প্রশ্নে প্রতিটি সেনানীবাসে গর্জে ওঠে দেশপ্রেমিক সৈনিকদের কামান। কামানের গগণবিদারী আওয়াজে স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার প্রত্যয়ে জেগে থাকা দেশপ্রেমিক জনতা বেড়িয়ে আসে রাজপথে। নারায়ে তাকবীর -আল্লাহু আকবর ও বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগানে আকাশ -বাতাস মুখরিত করে তোলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রিয় জনতা। জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে নেমে আসেন জনতার কাতারে। সৃস্টি হয় বিপ্লবী সিপাহী -জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি । কামানের গর্জন ঘোষনা করলো বাংলাদেশ কোন পরাভব মানেনা। আর এরই মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার সাধ গ্রহন করলো। যদিও ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসর্মপন করেছিল। পাকিস্তানের বিদায়ের মধ্য দিয়ে সহযোগিতার নামে ভারতের অনুপ্রবেশ ঘটে। নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অপচেষ্টা চালায় ভারতীয় বাহিনী । যে কারনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসর্মপন অনুস্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানিকে ষড়যন্ত্র করে আসতে দেওয়া হয়নি। পাকিস্তানের জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী ও ভারতের জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আনুষ্ঠানিক আত্মসর্মপন দলিলে স্বাক্ষর করে। আর এ কারনে এখনো ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর তাদের ইস্টার্ন ভিক্টোরী ডে পালন করে আসছে। এটা বাঙালী জাতির জন্য অপমানজনক বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। আর এ জন্য ১৯৭৫ এর ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের সিপাহী -জনতার বিপ্লব ও সংহতির মাধ্যমে স্বকীয়তা অর্জনকে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
৭ নভেম্বরের এই বিপ্লব ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক অন্যান্য বিরল ঘটনা। এই ঐতিহাসিক বিপ্লবকে শুরু থেকেই ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে আধিপত্যবাদী অপশক্তির এদেশীয় দোসররা।
প্রতিপক্ষরা এটাকে সৈনিক হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে সেই শুরু থেকে। তারা বার বার সিপাহী -জনতার এই ঐতিহাসিক বিপ্লবের চেতনায় আঘাত হানার অপচেষ্টা চালিয়েছে। ইতিহাসের মূল্যায়ন , সেদিন যদি সিপাহী -জনতার বিপ্লব সংঘটিত না হতো ;তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতো। আজ যারা এই দিনটির বিরুদ্ধে কথা বলে ;তারা মূলত দেশ ও জাতীর প্রতিপক্ষ অপশক্তি এবং দুশমন । বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঐক্যমতের সরকারের নামে আর্দশীক শত্রুদের সাথে আতাত করে রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিপ্লবের রাস্ট্রীয় ছুটি বাতিলের ব্যাপারে কথার সুত্রপাত করলে ; দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সরকারের এই অন্যায় ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ করে আসছিল । এ সময় ৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবস সংক্রান্ত বিষয়ে দৈনিক দিনকাল ও দৈনিক সংগ্রামে আমার লিখা একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়। এ প্রবন্ধের এক জায়গায় আমি লিখেছিলাম, অভিজ্ঞ মহলের ধারনা যদি ৭ নভেম্বরের ছুটি বাতিল করা হয় ; তাহলে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। প্রকাশিত প্রবন্ধের এই অংশটাকে কেন্দ্র করে ১২ আগষ্ট ১৯৯৬ আমাকে সরকারের
র্নিদেশে সিটি এসবির একটি বিশেষ টিম আমার মতিঝিলের অফিস থেকে গ্রেফতার করে। নাশকতার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক করে তোলার অভিযোগ এনে আমাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরন করে। পরর্বতিতে আমাকে তিন মাসের আটকাদেশ প্রদান করা হয়। এ সময় রিমান্ডের নামে মতিঝিল থানায় আমার উপর চালানো হয়েছিল অমানুষিক র্নিমম র্নিযাতন । সেই র্নিযাতনের কষ্ট আজও বহন করে চলছি। স্বনামধন্য আইনজীবী ব্যারিস্টার সাহাদাৎ হোসেনের মাধ্যমে আমার অনুজপ্রতিম বন্ধু ও সহযোদ্ধা সাংবাদিক ইন্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিমের দ্বারা রিট পিটিশেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মাননীয় হাইকোর্ট তৎকালিন আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে আমার আটকাদেশের বিষয়ে রুলনিশি জারি করে এবং সর্বশেষ জামিনে মুক্তি লাভ করি।
সে সময় আমার মতো অনেক সংবাদকর্মী , রাজনীতিবীদ ও রাজনৈতিক সর্মথক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের চরম র্নিযাতনের শিকার হয়েছেন। তারা ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের ঐতিহাসিক দিনকে তাদের নিপাত যাওয়ার শক্তি মনে করে। যে কারনে তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক দিনের যে কোনো অনুস্ঠান বানচাল করার নানা ষড়যন্ত্র করেছিল।
২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবের পর যখন প্রতিবিপ্লবীরা তৎপর সেই সময় দেশের মানুষ মনে করে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে ৭ নভেম্বর এখন খুব বেশী প্রাসঙ্গিক। ইতোমধ্যে দেশের সর্বস্তরের মানুষ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৭ নভেম্বরর সাধারণ ছুটি পূর্ণবহাল ও জাতীয় বিপ্লব সংহতি দিবস রাস্ট্রীয় মর্যাদায় পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
সে কারনে এই পতিত ফ্যাসীবাদী আওয়ামীলীগ ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে জাতিসত্তা বিরোধী অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্রের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে ৭ নভেম্বরের বিপ্লবী চেতনা ধারন করে ফ্যাসীবাদ বিরোধী অপশক্তি সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ২০২৪ এর বিপ্লব সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে হবে। সমুন্নত রাখতে হবে ৭ নভেম্বরের বিপ্লবী চেতনা। জোটবদ্ধ উচ্চারন করতে হবে বাংলাদেশ কোনো পরাভব মানেনা।

লেখকঃ প্যারিস থেকে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments