সরকারী দল আওয়ামীলীগকে লুটেরা এবং সরকারীদলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী দল হিসেবে উল্লেখ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল স্তরে এই দলের নেতাদের ‘সভ্যতার জন্য বৈরী’ ঘোষনা করার আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি ‘এবি পার্টি’। আজ দলটির উদ্যোগে রাজধানীর বিজয়নগরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ থেকে এ আহ্বান জানান দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে তারা বলেন একটি অবৈধ একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেই পূর্বের ন্যায় সিন্ডিকেট বানিজ্যকে চাঙ্গা করে তুলেছে আওয়ামীলীগ। যার ফলে ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে জনগণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ গড়ে তুলেছে ধর্ষণ, সন্ত্রাস আর নৈরাজ্যের অভয়ারণ্য। বক্তারা বলেন, সরকারের সিন্ডিকেট বানিজ্য ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই অরাজকতা আর চলতে দেয়া যায়না। অবিলম্বে তারা জনগণের রক্তচোষা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান।
সকাল সাড়ে ১১ টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন বিজয়-৭১ চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম নাজমুল হক, সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার সকল অঙ্গীকার আওয়ামীলীগ ভঙ্গ করেছে। সারাবাংলার কৃষক যা উৎপাদন করে তার মূল্য সে পায়না অন্যদিকে আওয়ামীলীগের গুন্ডা পান্ডারা রাস্তার মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজি করে এমন পরিস্থিতি তৈরী করেছে যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আর থাকছেনা। আমদানিকৃত সকল পণ্য আওয়ামী সিন্ডিকেটের দখলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হল দখল শুধু নয় সেখানে আজ আমাদের ছাত্রী বোনেরাও সম্ভ্রম নিয়ে টিকে থাকতে পারছেনা। ছাত্রলীগের গুন্ডারা স্বামীকে বেধে রেখে স্ত্রীকে নির্যাতন করছে, চোরের মতো ঘরে ঢুকে নারী নির্যাতন চালাচ্ছে। এই সমস্ত অপকর্ম চলতে দেয়া হবেনা। এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে এবি পার্টি গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করবে ইনশাআল্লাহ। তিনি জনগণকে এবি পার্টির আন্দোলনে সবাইকে শরিক হওয়ার আহবান জানান।
বিএম নাজমুল হক বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলেই জনগণের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়। মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। সব সময় তারা লুটপাট করে মানুষের অধিকার হরণ করে। সারাবিশ্বে রমজানে জিনিস পত্রের দাম কমে, অন্যদিকে আওয়ামীলীগ রমজানের আগেই সিন্ডিকেট করে সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে।
মজিবুর রহমান মঞ্জু তার বক্তব্যে গতকাল ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর ছাত্রলীগের সন্ত্রাস নৈরাজ্যের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন; সকল ক্যম্পাস থেকে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলোকে অস্ত্রের জোরে বের করে দিয়ে দখলে নিয়েছে ছাত্রলীগ। এখন তারা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এর মূলে আছে যাচ্ছেতাই মাদকের ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং ছাত্রী ও নারীদের সম্ভ্রম লুন্ঠনের মানবতাবিরোধী অপকর্মের প্রতিযোগিতা। তিনি বলেন আওয়ামীলীগ নেতারা একদিকে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আর ছাত্রলীগ নেতারা আছেন নারীদের ইজ্জত লুন্ঠনের সেঞ্চুরী উদযাপনে ব্যাস্ত। তিনি আওয়ামীলীগকে লুটেরা এবং ছাত্রলীগকে মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী দল হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল স্তরে এই দলের নেতাদের ‘সভ্যতার জন্য বৈরী’ ঘোষনা করার আহ্বান জানান।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, সরকার নিজ দেশের স্বার্থ ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনকে কোনরকম অগ্রাধিকার না দিয়েই ৩৫০ বার্মিজ সীমান্তরক্ষী কে ফেরত দিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে চলা গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোন দায় এসকল পুলিশ, সেনা সদস্যদের ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হয়নি যা একটি অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। মিয়ানমারের কারাগারে অনেক বাংলাদেশী জেলে আটক আছে, তাদেরকে ফিরিয়ে আনবার জন্য সমঝোতা হতে পারতো। আবার বাংলাদেশের কারাগারে শতাধিক মিয়ানমারের নাগরিক বন্দী আছে, যাদেরকে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ফেরত নিচ্ছে না। সে ব্যাপারেও কোন উদ্যোগ নেয়া হলো না। দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে না পারলেও কিন্তু ড. ইউনুসকে হেনস্তা করবার কোন ঘাটতি নেই। গত কয়েকদিন গ্রামীন ভবনের আটটি প্রতিষ্ঠান সরকার দলীয় গুন্ডা-পান্ডা দিয়ে দখল করানো হয়েছে। এখন সেসকল প্রতিষ্ঠানের সঞ্চিত অর্থ লুট করবার আয়োজন চলছে। আওয়ামী দখলদারদের হাতে দেশ পরাধীন হয়ে যাবার পরে কোন প্রতিষ্ঠান আর স্বাধীনভাবে পরিচালনা করা যাবে না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুবপার্টির আহবায়ক এবিএম খালিদ হাসান, সহকারী সদস্যসচিব শাহ আব্দুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার ফারুক, গাজী নাসির, যুগ্ম সদস্যসচিব সফিউল বাসার, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, আমিরুল ইসলাম নুর, যুবপার্টি মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, উত্তরের সদস্যসচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেলিম খান, আমেনা বেগম, ফেরদৌসী আক্তার অপি, মশিউর রহমান মিলু, রিপন মাহমুদ, ছাত্রনেতা হাসিবুর রহমান খান, পল্টন থানা আহবায়ক আব্দুল কাদের মুন্সি সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।